বিয়ে করতে হলে আমার কি কি প্রয়োজন?
- বয়স: বিয়ে করতে হলে আপনাকে কমপক্ষে ১৮ বছর বয়স হতে হবে। আপনার বয়স ১৬ বছর হলে সেক্ষেত্রে আপনার বাবা-মায়ের সম্মতি প্রয়োজন
- নাগরিক অবস্থান: আপনি যদি একবার বিয়ে করেন সেক্ষেত্রে আরেকবার বিয়ে করতে পারবেন না। কারণ, কানাডাতে একাধিক বিয়ে বেআইনী। যদি আপনার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে আপনাকে বিবাহ বিচ্ছেদের সনদপত্র দেখতে হবে।
- মুক্ত ইচ্ছা: বিয়ের ব্যাপারে আপনার মুক্ত ইচ্ছা ও পূর্ণ সম্মতি থাকতে হবে। আপনাকে জোর করে বিয়েতে রাজি করানো হলে চলবে না।
- পরিচয়: আপনার আইনগত দলিলপত্র থাকতে হবে (যেমন: জন্ম নিবন্ধনের সনদ)
- অনুমোদিত ব্যক্তি: কানাডার আদালত কর্তৃক আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত ব্যাক্তি বিবাহ সম্পাদন করতে পারবেন।
- ঘোষণা: বিয়ে সংক্রান্ত ঘোষণাপত্র বিয়ের কমপক্ষে ২০ দিন আগে বিবাহ সম্পাদনকারী ব্যাক্তির মাধ্যমে জমা দিতে হবে।
লক্ষণীয়: এই শর্তগুলোর যেকোনো একটি আপনি মানছেন না মানেই, ক্যুইবেক-এ আপনি আইনগতভাবে বিবাহিত বলে গণ্য হবেন না।
কোন ধরনের সম্পর্কে আমি আছি?
আপনি কোন ধরনের সর্ম্পকে জড়িয়ে আছেন তা জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটা আপনার আইনগত অধিকার ও বাধ্যবাধকতাকে প্রভাবিত করে। মানুষ ভিন্ন ভিন্নভাবে একে অপরকে আইনগতভাবে অঙ্গীকার করে থাকে। আছে বিবাহবন্ধন (সিভিল অথবা ধর্মীয়), সিভিল ইউনিয়ন এবং অলিখিত ব্যবস্থা বা ডি ফ্যাক্টো ম্যারেজ। এই পুস্তিকার বিষয়বস্তু বিবাহবন্ধেনের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
আপনার কি আইনগত বিবাহ সনদপত্র আছে?
আপনি যখন ক্যুইবেক-এ বিয়ে করবেন সিভিল স্ট্যাটাস রেজিস্টারে আপনাকে বিবাহিত হিসেবে লেখা থাকবে। আপনি বিবাহ সনদের জন্য আবেদন করতে পারবেন। আপনার সনদপত্র হারিয়ে গেলে, নতুন আরেকটি সনদের জন্য আপনি আবেদন করতে পারবেন।
আপনি কি অন্য কোনো দেশে বিয়ে করেছেন?
যদি তাই হয়, আপনার বিয়ে ততক্ষণ পর্যন্ত আইনগতভাবে ঠিক যতক্ষণ বিয়ের সনদ আছে এবং বিয়ের সময় আপনার বয়স কমপক্ষে আঠারো বছর ছিল অথবা ষোল বছর বয়স হলে সেক্ষেত্রে আপনার বাবা মায়ের ওই বিয়েতে সম্মতি ছিল।
কিভাবে বিবাহ আপনার ছেলে-মেয়েদের প্রভাবিত করে?
প্রত্যেকটি শিশুই তার বাবা-মায়ের কাছে থেকে সুরক্ষা, নিরাপত্তা ও মনোযোগ পাওয়ার অধিকার রাখে। শিশুর নৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, আবেগজনিত ও শারীরিক প্রয়োজনের দিক বিবেচনায় আনতে হবে। একটি শিশু বাবা ও মা, উভয়ের কাছ থেকে সবসময় তার প্রাপ্য সুরক্ষা পাবে, শিশুটির গর্ভধারণ বিয়ের আগে হোক আর পরে হোক, বাবা-মায়ের মধ্যে আদৌ বৈবাহিক সম্পর্ক থাকুক আর না থাকুক, অথবা বিবাহ বিচ্ছেদ হলেও একটি শিশু তার সুরক্ষা পাবে।
মনে রাখুন, বিবাহ দুইজন সমমর্যাদার ব্যাক্তির মধ্যে। সুতরাং, আপনাদের দুইজন একে অপরে ওপর একই দায়িত্ব ও অধিকার আছে।
আপনার দায়িত্ব
- বিশ্বস্ত ও শ্রদ্ধাশীল হওয়া এবং স্বামী বা স্ত্রীর সঙ্গে সমানভাবে ব্যবহার করা
- শারীরিক ও মানসিক সহিংসতার ব্যবহার না করা
- আর্থিক সহযোগিতা করা
- পারিবারিক সিদ্ধান্তে গ্রহণের জন্য সম্মতি নেয়া যা আপনার শিশু ও আপনার পরিবারের সম্পদের ওপর প্রভাব ফেলে (যেমন: বাড়ি বিক্রি করা অথবা বন্দক রেখে ঋণ নেয়া)।
আপনার অধিকার
- সমানভাবে মূল্যায়িত হওয়া
- নিরাপত্তার সঙ্গে বসবাস করা
- অন্তরঙ্গ সম্পর্ক করতে প্রত্যাখ্যান করা
- বিবাহ বিচ্ছেদ অথবা আলাদা হয়ে যাওয়া
- নিজের আবেগজনিত এবং আর্থিক সহযোগিতা একা একা গ্রহণ করা
- কোনো দলিল না বুঝে অথবা দ্বিমত হয়ে স্বাক্ষর করতে প্রত্যাখ্যান করা
- আপনার ও আপনার শিশুর সব দলিলপত্র দেখার সমান অধিকার থাকা
- আপনার স্বামী বা স্ত্রীকে কানাডা আসতে সহায়তা করা।
এটা কি?
আপনার বয়স যদি ১৮ বছরের বেশি বয়স এবং আপনি যদি কানাডীয় হোন অথবা আপনি যদি কানাডার স্থায়ী বাসিন্দা হোন তাহলে আপনি আপনার স্বামী বা স্ত্রীকে কানাডার অভিবাসী হতে সহযোগিতা করতে পারেন। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ আইনগত ও আর্থিক অঙ্গীকার, স্বামী বা স্ত্রী হিসেবে ৩ বছরের জন্য আপনার স্বামী বা স্ত্রীকে আর্থিক সহযোগিতা করা আপনার দায়িত্ব। এমনকি যদি আপনি বিবাহ বিচ্ছেদ করেন, তারপরও স্বামী বা স্ত্রীরকে আর্থিক সহযোগিতা করা আপনার দায়িত্ব।
সতর্ক হোন: যে সব দম্পতির দাম্পত্য জীবন দুই বছর অথবা তার কম এবং স্পন্সরশিপ আবেদন করার সময় পর্যন্ত যাদের কোনো সন্তান হয়নি এমন ব্যাক্তিদের জন্য ২০১২ সালের ২৬ অক্টোবরে শর্ত সাপেক্ষে পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি সুবিধা চালু করা হয়েছে। পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি সুবিধা পাওয়ার পর থেকে একটি দম্পতিকে অবশ্যই একসঙ্গে দুই বছর থাকতে হবে। অন্যথায়, এই সুবিধা ফেরত নেয়া হবে স্পন্সরড স্পাউজকে ফেরত পাঠানো হতে পারে । পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট ও শর্ত সাপেক্ষে পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি সুবিধা পাওয়া ব্যাক্তিদের আইনগত অধিকার একই।
দাম্পত্য সহিংসতার ক্ষেত্রে আইনজীবীর পরামর্শ নেয়া গুরুত্বপূর্ণ কারণ এসব ক্ষেত্রে আইনে কিছু ব্যতিক্রম আছে।
যদি আমি সরকারের আর্থিক কল্যাণে থাকি, আমি কি আমার স্বামী বা স্ত্রীর আর্থিক সহযোগিতা করতে পারবো?
না। আপনাকে অবশ্যই আপনার নিজের জন্য আয় করতে হবে এবং তারপর আপনার স্বামী বা স্ত্রীকে আর্থিক সহযোগিতা করতে পারবেন।
আমি কি আমার স্পন্সরশিপ প্রত্যাহার করতে পারবো?
না। একবার ভিসা ইস্যু হলে, স্পন্সরশিপ আর প্রত্যাহার করা যাবে না।
স্পন্সরশিপ প্রতারণা কি?
কানাডা আসা ও থাকা সহজ করার জন্য কোনো ব্যক্তিকে বিয়ে করাকেই স্পন্সরশিপ প্রতারণা বলে। এটা বেআইনী। এর কারণে আপনার মারাত্নক আর্থিক অথবা ব্যক্তিগত ক্ষতি হতে পারে। পরিবারের চাপে পড়েই হোক আর ভবিষ্যত স্বামী দ্বারাই হোক, অসংখ্য নারী স্পন্সরশিপ প্রতারণার শিকার হচ্ছে।
সব সম্পর্কে সমস্যা থাকে, যদি মারাত্নকভাবে সমস্যার সম্মুখীন হোন, সমাধান সর্ম্পকে জানুন সহযোহিতা নিন।
বিবাহ বিচ্ছেদ আর বিচ্ছেদের মধ্যে পার্থক্য কি?
সেপারেশন কাকে বলে
- আপনি এবং আপনার স্বামী বা স্ত্রী আর একসঙ্গে থাকছেন না
- আইনগত আবস্থান: আপনি আইনগতভাবে এখনো বিবাহিত
- আইনগত অধিকার: বিবাহিত দম্পতি হিসেবে আপনার অধিকার ও দায়দায়িত্ব বিবাহিত দম্পতির মতোই থাকবে। এমনকি আয়-রোজগার আলাদা ও আলাদা বাসায় থাকলেও।
বিবাহ বিচ্ছেদ কি
- কানাডীয় আদালত আপনার বিবাহবন্ধনের সম্পর্ক সমাপ্ত করে দিয়েছে
- আইনগত অবস্থান: আপনি আর আইনগতভাবে বিবাহিত হিসেবে বিবেচিত হবেন না এবং আপনার অধিকার ও বাধ্যবাধকতা শেষ হয়ে গেছে।
- আইনগত অধিকার: আপনার স্বামী বা স্ত্রীকে সহযোগিতা করার একটি অধিকার আছে, পারিবারিক সম্পত্তির মূল্য স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সমানভাবে বন্টন করতে হবে।
বিবাহ বিচ্ছেদ করতে হলে আপনার কি প্রযোজন
- বিবাহের প্রমাণ (আইনগত সনদ)
- ইচ্ছা: আপনি বৈবাহিক সম্পর্কের সমাপ্তি টানতে চান
- আবাস: আপনি অবশ্যই কানাডার কোনো প্রদেশে বা এলাকায় কমপক্ষে এক বছর বছর থেকেছেন
- উদ্দেশ্য: আপনি আপনার স্বামী বা স্ত্রী থেকে এক বছর আলাদা বসবাস করেছেন অথবা আপনার স্বামী বা স্ত্রী শারীরিকভাবে অথবা মানসিকভাবে নির্দয় অথবা আপনার স্বামী বা স্ত্রী অন্যের সঙ্গে ব্যভিচার করেছে।
আমি যদি অন্যদেশে বিয়ে করি, আমি কি কানাডায় বিবাহ বিচ্ছেদ করতে পারবো?
হ্যাঁ। কিন্তু, সেক্ষেত্রে আপনি যে বিয়ে করেছেন তার আইনগত প্রমাণ লাগবে। কানাডার বাইরে কানাডার বিবাহ বিচ্ছেদ বৈধ না ও হতে পারে। কানাডার বাইরে যাওযার আগে নিশ্চিত হোন।
কি হয় যখন স্পন্সর এবং স্পন্সর পাওয়া ব্যক্তি বিবাহ বিচ্ছেদ করেন?
বিবাহ বিচ্ছেদ স্পন্সরশিপে কোনো প্রভাব ফেলে না। স্পন্সরের একই আইনগত বাধ্যবাধকতা থাকে, এবং স্পন্সরড ব্যক্তি স্পন্সরশিপের সময় পর্যন্ত দেশে থাকতে পারে।