দাম্পত্য সহিংসতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা আলোচনা করা প্রয়োজন। এটা যে কারো জীবনে ঘটতে পারে।
কানাডাতে দাম্পত্য সহিংসতার ঘটনায় প্রতিবছর প্রায় ৪০,০০০ ব্যাক্তি আটক হয়। কিউবেকে প্রতি চারজনের একজন দাম্পত্য সহিংসতার কারণে পুলিশকে খবর দেন। এর মধ্যে প্রতি ১০ জনের ৮ জনই নারী। তবে, কানাডাতে দাম্পত্য সহিংসতার প্রকৃত চিত্র পাওয়া বেশ কঠিন। কারণ, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সহিংসতার খবর পুলিশকে জানানো হয় না।
পারিবারিক সহিংসতা কি?
বারবার একই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখে পারিবারিক সহিংসতা চেনা যায়, সাধারণত যার মাত্রা এবং ঘটনার সংখ্যা বাড়তে থাকে। এই প্রক্রিয়াটি সহিংসতা চক্র হিসেবে পরিচিত। যার বৈশিষ্ট হলো মানসিক চাপ বেড়ে যাওয়া, দুর্ব্যবহার, আত্মোপলব্ধি, মিমাংসা এবং শান্ত সময়। (সহিংসতার চক্র সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে সাইকেল অব ভায়ালেন্সের দ্বিতীয় অংশ দেখুন)
পারিবারিক সহিংসতা স্বামী এবং স্ত্রীর মধ্যে যে অসমতার থাকে তারই ফলাফল যেখানে একজন স্বামী বা স্ত্রী অপরজনকে শাসন ও নিয়ন্ত্রণ করে। এটা মনে রাখা জরুরি যে ধর্ম, বর্ণ, বয়স ও সমাজের স্তর, নির্বিশেষে যে কেউ পারিবারিক সহিংসতার শিকার হতে পারে।
পারিবারিক সহিংসতার শিকার ব্যাক্তি মুখোমুখি হতে পারে
- অপমান
- একাকিত্ব
- হয়রানি
- ভীতি প্রদান
- হুমকি
- অবমূল্যায়ন
- শারীরিক ও যৌন
- ইমোশনাল ব্লাকমেইল
- অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ
স্বামী বা স্ত্রীর আয় ব্যায় নিয়ন্ত্রণ ও দৈনন্দিন কাজে নজরদারি করে স্বামী বা স্ত্রী তার স্বাধীনতা বাধা গ্রস্থ করতে পারে। পরিশেষে, এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, একজনের ওপর আরেকজনের আধিপত্য মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা এমন পর্যায়ে যেতে পারে যে তাদের পক্ষে সেখান থেকে বের হওয়া অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে ।
মনে রাখুন: যদিও একজন স্বামী বা স্ত্রী মদ, মাদক অথবা মানসিক চাপকে তার সহিংস আচারণের কারণ হিসেবে যুক্তি দেখাতে পরে। সেগুলো কোনোভাবেই অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। কোনোভাবেই না।
আক্রমণের প্রকার
মৌখিক আক্রমন: এটা ব্যবহার করা হয় অন্যজনকে ভয় দেখাতে, অপমান করতে এবং নিয়ন্ত্রন করতে। এটা সূক্ষ্ম হতে পারে, আবার খুবই সোজাসাপ্টা হতে পারে।
- চিৎকার করা অথবা উচ্চস্বারে কথা বলা
- অন্যের কারণে ভুক্তভোগীকে দোষারোপ করা
- অপমান করা
মনস্তাত্ত্বিক হয়রানি: এটা প্রাথমিকভাবে একজন ব্যাক্তির মনোভাব ও তার কার্যকলাপ আলোচনা করে। অপমানজনক কাজকর্ম মনস্তাত্ত্বিক সরলতাকে নষ্ট করে। মৌখিকভাবে অপমানের মতো, মনস্তাত্ত্বিক হয়রানি সুক্ষ অথবা আক্রমনাত্নক হতে পারে।
- ব্যাক্তিকে বন্ধু-বান্ধব ও পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করা
- অপমান করা, ভীতি প্রদর্শন করা
- ভুক্তভুগীকে প্রত্যক্ষভাবে বা পরোক্ষভাবে হুমকি দেয়া (যথা:যদি একজন স্বামী তার সন্তানকে অপহরণ অথবা হত্যা করার হুমকি দেয়।)
যৌন হয়রানি: যৌন হয়রানি হলো এমন বিষয় যার প্রকৃতি যৌন সংক্রান্ত (শারীরিক স্পর্শ হতে পারে নাও হতে পারে), যেটি করা হয় অন্যের সম্মতি ছাড়াই। এই অসম্মতি হতে পারে না বলার মাধ্যমে অথবা অসম্মতির অভাস দেয়া (যেমন: আপনি আপনার স্বামী বা স্ত্রীকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলেন অথবা সাধারনভাবে তাকে ইঙ্গিত দিলেন যে আপনি অস্বস্তি বোধ করছেন। আপনার অসম্মতি কথা জানাতে এগুলোই যথেষ্ঠ।)
- স্বামী স্ত্রীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে যৌন সংক্রান্ত স্পর্শ বা যৌন সংক্রান্ত কাজ
- পর্নগ্রাফি তৈরির উদ্দেশ্যে কাউকে ব্যবহার করা
- যৌনতার কারণে কাউকে হয়রানি করা (অফিসে, স্কুলে অথবা রাস্তায়)
সবসময় মনে রাখবেন জোর না করেই সবসময় সম্মতি পাওয়া উচিৎ!
শারীরিক অমর্যাদা: স্বামী বা স্ত্রীর বিরুদ্ধে সহিংসতামূলক আচারণই এর বৈশিষ্ট। যখন কোনো সম্পর্কের মধ্যে শারীরিক অমর্যাদা থাকে, এটা খুবই স্বাভাবিক যে এর সঙ্গে মৌখিক, মনস্তাত্ত্বিক অথবা যৌন অমর্যাদা আছে।
- কামড় দেয়া, চিমটি কাটা অথবা ধাক্কা দেয়া
- আঘাত করা/ঘুষি মারা, লাথি দেয়া
- আটকে রাখা
- অস্ত্র দেখিয়ে হুমকি দেয়া
- মেরে ফেলার হুমকি দেয়া
- জিনিসপত্র ছুঁড়ে মারা
অর্থনৈতিক অমর্যাদা: এটা অথনৈতিকভাবে স্বামী বা স্ত্রীকে সচ্ছল হতে বাধা দেয়া। আরো একবার, এই ধরনের অমর্যাদা প্রত্যক্ষভাবে অথবা পরোক্ষভাবে হতে পারে।
- স্বামী বা স্ত্রীকে কর্মক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করা অথবা বাধা দেয়া
- স্বামী বা স্ত্রীর অর্থ নিয়ন্ত্রণ করা
- স্বামী বা স্ত্রীর চেক বাজেয়াপ্ত অথবা আয়ের উৎস বন্ধ করা
আত্নিক হয়রানি: বিশেষ কোনো ধর্ম পালনে স্বামী বা স্ত্রীকে জোর করা অথবা স্বামী বা স্ত্রীর কাঙ্খিত ধর্ম পালনে নিষেধ করা।
- ধর্ম পালনে অথবা ধর্ম পালন না করতে হুমকি বা ভয় দেখানো
- কোনো ধর্মীয় প্রার্থনা কেন্দ্রে যেতে বাধা দেয়া
- কোনো ধর্মীয় কেন্দ্রে যেতে জোর করা
- তাদের ধর্মকে অবমূল্যায়ণ করা
আমি কেমন অনুভব করি?
যদিও ভুক্তভুগীদের কোনো নির্দিষ্ট অনূভুতি থাকে না। নিচে কিছু সাধারন অনূভতির কথা দেয়া হলো যা একজন ভুক্তভুগী অনুভব করতে পারে।
- সার্বক্ষনিকভাবে আপনি আপনার স্বামী বা স্ত্রীর ভয়ে থাকতে পারেন
- আপনি একাকিত্ব, অসহায় অথবা ক্লান্ত বোধ করতে পারেন।
- আপনি হতাশ অথবা দ্বিধান্তিত হতে পারেন
- আপনি ও আপনার সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত হতে পারেন।
কিভাবে আপনার স্বামী বা স্ত্রী কাজ করে?
- তুচ্ছ বিষয় নিয়ে যখন তখন মেজাজ দেখাতেপারে
- তারা ঈর্ষান্বিত হতে পারে এবং এমনটা দাবি করতে পারে যে তাদের ঈর্ষা আপনার প্রতি ভালোবাসার চিহ্ন
- সকল সামাজিক সহযোগিতা থেকে আপনাকে দুরে রাখতে আপনাকে আপনার বন্ধু-বান্ধব ও আত্নীয়দের কাছে বিচ্ছিন্ন করতে আপনার বন্ধুবান্ধবকে অবমূল্যায়ন করতে পারে
- লিঙ্গের ভূমিকা নিয়ে তাদের বাঁধাধরা দৃষ্টিভঙ্গি থাকে
- তারা বিশ্বাস করে যে সংকট নিরসনে সহিংসতা করা ঠিক
আমার শিশুদের ওপর সহিংসতার প্রভাব
দাম্পত্য সহিংসতার মুখোমুখি হওয়া ছেলে মেয়েদের অনুভূতির উত্থান পতন হয়। সহিংসতার মুখোমুখি হওয়া শিশুদের সহিংসতার প্রভাব বয়স অনুসারে ভিন্ন হয়।
নবজাতকের ওপর প্রভাব
- সহজেই সচকিত হওয়া থেকে ভয় পাওয়া পর্যন্ত।
স্কুল গামী শিশুদের ওপর প্রভাব
- কম আত্নমর্যাদা সম্পন্ন হয় এবং স্কুলে মনোযোগ দিতে পারা কঠিন হয়।
কিশোরীদের ওপর প্রভাব
- অনেকে হতশায়, উদ্বেগে ভুগেন অনুভূতিকে অসাড় করতে অনেকে মাদকের দিকে ঝোঁকেন।
ছেলে মেয়েরা যারা দাম্পত্য সহিংসতা প্রত্যক্ষ করেন, কোনো সমস্যা থেকে কাটিয়ে উঠতে তাদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে এবং তারা সহিংস আচারণকে স্বাভাবিক হিসেবে মনে করেন যা অস্বাভাবিক ও অপমানজনক সম্পর্কের কারণ হয়ে দাড়ায়। যেহেতু প্রত্যেকটি ছেলে-মেয়ের সহিংসতার অভিজ্ঞতা ভিন্ন তাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেটি সেটা হলো তাদের সহিংসতার সম্মূখীন না করা। পরিবারের সদস্য, বন্ধুবান্ধব ও সমাজকর্মীদের সহযোগিতায় আপনি বেরিয়ে আসতে পারেন।
পারিবারিক সহিংসতার চক্রের চারটি পর্যায় আছে। প্রত্যেকটি পর্যায়ে আক্রমনকারীর আচরণ ও প্রভাব ভুক্তভুগির ওপরে পড়ে। এই ধরনের চক্রের উপস্থিতি বেশি দেখা যায় যখন সম্পর্কের মধ্যে শারীরিক সহিংসতা থাকে।
শারীরিক, মনস্তাত্ত্বিক আবেগজনিত অথবা যৌন সহিংসতার ধরন যাই হোক না একটি চক্র থাকে। পরিশেষে, প্রত্যেকটি পর্যায়ের সময়কাল এবং তীব্রতা এক সম্পর্ক থেকে আরেক সম্পর্কে ভিন্ন হয়।
দুইটি সহিংসতার পর্বের মধ্যে অল্প সময়ের মধ্যে সহিংসতার চক্র বারবার সংগঠিত হয়। আর এটা মনে রাখতে হবে যে সহিংসতার শেষ পর্বটি স্বামী বা স্ত্রীর হত্যা।
সুতরাং নীরবতা ভাঙ্গতে হবে। কারণ, সহিংসতার চক্র ভাঙ্গার এটাই একমাত্র পথ।
১. চাপ বৃদ্ধি পাওয়া
- দীর্ঘদিন থেকে ছোটখাটো সমস্যা তৈরি হওয়া
- এই ঘটনাগুলো আচার-আচারণ পরিবর্তন থেকে চোখ রাঙ্গানী ও সমালোচনা পর্যন্ত হতে পারে।
- সহিংসতা ভুক্তভুগীর মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ ও ভয় সৃষ্টি করে
- সচারচার ভুক্তভুগী এই পরিস্থিতির জন্য নিজেকে দায়ী করে এবং এটাকে সহিংসতার একটি ঘটনা মনে করে।
২. সহিংসতার বিস্ফোরণ
- সহিংসতার অবনতি হয়
- সহিংসতার পর্ব এক মিনিট থেকে কয়েকদিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
- ভুক্তভুগী বিহ্বল ও দ্বিধান্বিত হতে পারে।
- ভুক্তভুগী নিজেকে শক্তিহীন মনে করে।
৩. সঠিক হিসেবে প্রমাণ করা
- সহিংসতাকারী তার কৃতকর্মকে সঠিক বলে দাবি করে
- ভুক্তভুগী এটাকে সঠিক বলে মেনে নিতে চায়
- এক পর্যায়ে ভুক্তভুগী নিজেকে প্রশ্ন করা শুরু করে তার স্বামী বা স্ত্রীর অপমানজনক ব্যবহারের জন্য সে দায়ী কি না।
৪. শান্তি ও সমঝোতার সময়
- সহিংসতাকারী স্বামী বা স্ত্রী ক্ষমা চাইতে পারে এবং প্রতিজ্ঞা করতে পারে যে এমন কাজ সে আর করবে না।
- সহিংসতাকারী স্বামী বলতে পারে যে সে পরিবর্তন হবে ভুক্তভুগীও আশা করে সে পরিবর্তন হবে।
- সহিংসতাকারী স্বামী দয়ালু ও শান্ত হবে
শেষ সময়টার কাল ভিন্ন হতে পারে এমন কি কিছু সম্পর্কে এর উপস্থিতি নাও থাকতে পারে। যদিও সমঝোতার একটি পর্যায়ে সহিংসতা শুরু হবে। সহিংসতা চক্র শুরু হবে আরো একবার।
একজন দাম্পত্য সহিংসতার শিকার হওয়া সম্পর্কে জানলে আমি কি করবো?
সাধারণতঃ দাম্পত্য সহিংসতার শিকার হওয়া একজন ব্যক্তি বিচ্ছিন্ন, একাকিত্ব ও ভয়ে থাকে সুতরাং এমনকি যদিও আপনি তাকে সহযোগিতা করতে দ্বিধান্বিত থাকেন, অন্ততঃ তার কাছে যান এবং তাকে জানান যে আপনি তাকে সহযোগিতা করতে এসেছেন। এটাই তাকে আশ্বস্ত করবে।
যদি কোনো ভুক্তভুগী আপনার কাছে মুখ খুলতে সিদ্ধান্ত নেয়; কোনো মন্তব্য না করে তার কথা শুনুন। তবে, নিশ্চিত হোন যে আপনি ও ভুক্তভুগী দুজনেই নিরাপদ পরিবেশে আছেন। ভুক্তভুগীর স্বামী বা স্ত্রীর সামনে মোটেও এসব কথা তুলবেন না।
ভুক্তভুগীকে কোনো সাপোর্ট সার্ভিস, সাপোর্ট গ্রুপ অথবা কোনো সমাজকর্মীকে পেতে সহযোগিতা করুন। তার অধিকার সম্পর্কে জানতে তাকে সাহায্য করুন।
আমি দাম্পত্য সহিংসতার শিকার, আমি কি করবো?
- নিজেকে বিচ্ছিন্ন করবেন না। আপনি সাচ্ছ্যন্দ বোধ করেন এমন কাউকে আপনার অবস্থার কথা জানান। তথ্য ও সহযোগিতা খুঁজুন।
- আপনাকে সহযোগিতা করার জন্য অনেক জিনিস আছে যেমন সমাজকর্মীর সঙ্গে কথা বলুন যিনি আপনার কথা শুনবেন এবং আপনাকে আপনার অধিকার ও বিভিন্ন উপায় সম্পর্কে তথ্য দেবেন। এই সেবা বিনামূল্যে এবং গোপন রাখা হবে।
- পুলিশকে ফোন করুন এবং আপনার ঘটনা জানান। এটা মনে রাখা দরকার যে পরবর্তীতে উল্লেখ করার জন্য রিপোর্ট নম্বরটি লিখে রাখতে হবে।
- পুলিশকে অভিযোগ দেয়ার পর প্রতিবেদন দাখিল নিয়ে আপনাকে কিছু করতে হবে না। আপনি যদি নাও চান, পুলিশ আপনার স্বামী স্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেন।
- মনে রাখবেন পুলিশের কাছে করা চারটি ফোনের একটি দাম্পত্য সহিংসতার অভিযোগ দিতে।
- আশ্রয় কেন্দ্রে যান, যদি আপনি আপনার বাড়িকে নিরাপদ মনে না করেন। আশ্রয় কেন্দ্র হলো নিরাপদ ও গোপনীয় স্থান যেখানে আপনি একটি নিদিষ্ট সময়ের জন্য থাকতে পারবেন। আশ্রয় কেন্দ্রে আপনি সমাজকর্মীদের সহযোগিতা পাবেন এবং নতুন জীবন শুরু করতে পারবেন।
আশ্রয় কেন্দ্রে দেয়া সেবাগুলো হলো: আলাদাভাবে পরামর্শ, সার্পোট গ্রুপ এবং সঙ্গ।
- কিছু আশ্রয় কেন্দ্রে আমাদের সমাজকর্মীরা আপনার ভাষায় কথা বলতে পারেন।
- সুতরাং, আপনি যে ভাষায় সাচ্ছন্দ্যবোধ করেন সে ভাষাতেই আপনাকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করা হবে। এই সেবাটাও বিনামূল্যে দেয়া হয়। সমাজকর্মীদের সঙ্গে আপনার সব ধরনের আলোচনা গোপন রাখা হবে।
আপনি যদি দাম্পত্য সহিংসতার শিকার হোন, তাহলে আপনি এক নন,আপনার নিরাপত্তার অধিকার আছে। সহযোগিতা চাইতে ভয় পাবেন না।
পারিবারিক সহিংসতা ব্যক্তিগত বিষয় না জাতীয় বিষয়?
- পারিবারিক সহিংসতাকে ব্যক্তিগত বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা হয় না;বরং এটি একটি সামাজিক বিষয় যেটি খোলাখুলি আলোচনা করা দরকার। অধিকন্তু, কানাডাতে দাম্পত্য সহিংসতাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।
- পারিবারিক সহিংসতাকে ব্যক্তিগত বিষয় বলে ভুক্তভুগীকে অপরাধী বানানো হয় এবং তার স্বামী বা স্ত্রীর নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়। এটা তাদের কোনো ধরনের সহযোগিতা পেতে বাধা দেয়।
সহিংস সম্পর্ক হওয়ার পরও কেন নারী বা পূরুষরা তাদের সঙ্গীদের সঙ্গে থাকেন?
- আক্রমণকারী স্বামী বা স্ত্রীর সঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়ার পেছনে অনেক কারণ থাকে। কিছু নারী আশা করেন যে তার স্বামী পরিবর্তন হবে(সহিংস আচারণ করবে না), অন্যরা সংসার ভাঙ্গার অপরাধবোধের কারণে এবং অনেক নারী আছেন যারা বিশ্বাস করেন যে তারা সংসার চালানোর জন্য আর্থিকভাবে সচ্ছল নন।
আপনার স্বামী বা স্ত্রী যদি তাদের সহিংস বিষয় নিয়ে সহযোগিতা চায়, সহিংসতা থামবে?
- সহিংস আচারণের জন্য চিকিৎসা আছে। কিন্তু, এটা অলৌকিক সমাধান নয়। স্বামী বা স্ত্রীর পরিবর্তনের প্রথম ধাপটি হলো স্বীকার করা যে তাদের পরিবর্তন হওয়া দরকার। অধিকন্তু, সহিংসতার ফলাফল (শারীরিক হোক আর মানসিক হোক) একাই শেষ হবে না। সহিংসতার প্রভাব এড়াতে ভুক্তভুগীকে পথ খুঁজতে হবে (যেমন:সাপোর্ট গ্রুপে গিয়ে সমাজকর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে হবে।)
পুরুষরা কি দাম্পত্য সহিংসতার শিকার হয়?
- হ্যাঁ। দাম্পত্য সহিংসতা সম্পর্কের নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করেই হয়; তাই পুরুষ ও নারী উভয়ই এই অপরাধের শিকার হতে পারে। বস্তুত, ক্যুইবেকে পারিবারিক সহিংসতার অভিযোগ আসা ঘটনার ১৫ শতাংশ শিকার হয় পুরুষরা।
দাম্পত্য সহিংসতা একটি সার্বজনীন সমস্যা যেটি ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে যে কাউকে প্রভাবিত করতে পারে। দাম্পত্য সহিংসতা থেকে নারীদের সুরক্ষা দিতে আর্ন্তজাতিক আইনে অসংখ্য কনভেনশন ও ট্রিটি আছে। এছাড়া অনেক দেশ নারীদের প্রতি সহিংসতা বন্ধ করতে আইন প্রণয়ন করেছে। কানাডাতে দাম্পত্য সহিংসতা সহ্য করা হয় না। বস্তুত দাম্পত্য জীবনের অনেক ঘটনাকে কানাডিয়ান সরকার অপরাধ হিসেবে গণ্য করে। সুতরাং, যেদেশ থেকে আপনি এসেছেন সেদেশে যে আইনই থাকুক না কেন, যখনই আপনি কানাডাতে, কানাডার আইনই আপনার জন্য প্রযোজ্য হবে।
সহিংসতার ধরন
“দাম্পত্য সহিংসতার” অনুচ্ছেদে যেমনটা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। অনেক ধরনের নারী নির্যাতন আছে এবং একজন নারী একই সঙ্গে এক বা একাধিক ধরনের নির্যাতনের শিকার হতে পারে।
- শারীরিক নির্যাতন
- যৌন হয়রানি
- মানসিক নির্যাতন
- আর্থিক নির্যাতন
- অবহেলা
কানাডার ক্রিমিনাল কোড অনুযায়ী, সব ধরনের নির্যাতনকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয় না। এছাড়া, নির্যাতনটি যদি অপরাধ হিসেবে তালিকায় না থাকে (যেমন: মানসিক নির্যাতন) এর অর্থ এটা নয় যে সেখানে কোনো দাম্পত্য সহিংসতা নেই।
ক্রিমিনাল কোডে দাম্পত্য সহিংসতা
(1) শারীরিক নির্যাতন
ক্রিমিনাল কোডে শারীরিক নির্যাতন বলতে কারো ইচ্ছার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যেমূলকভাবে শক্তি প্রয়োগ করা। এটা শারীরিক ব্যাথা অথবা আঘাতের কারণ হতে পারে, যা স্বল্পমেয়াদী অথবা দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে। শারীরিক নির্যাতন হলো:
- ধাক্কা দেয়া অথবা ঠেলা দেয়া
- আঘাত করা, থাপ্পর দেয়া অথবা লাথি দেয়া
- চিমকি কাটা অথবা ঘুষি মারা
- ছুরি মারা অথবা কেটে দেয়া
- কাউকে গুলি করা
- কারো দিকে কিছু ছুড়ে মারা
- কাউকে পুড়িয়ে দেয়া
- নির্যাতনের সময় কাউকে ধরে রাখা
- কাউকে ঘরে আটকে রাখা অথবা বেঁধে রাখা
- কাউকে হত্যা করা
সবগুলোই কানাডাতে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং ক্রিমিনাল কোডের ২৬৫ অনুচ্ছেদে আঘাত, শারীরিক আঘাত শিরোনামে এবং ২২২ অনুচ্ছেদে হত্যা, খুন অথবা জবাই শিরোনামে উল্লেখ করা রয়েছে।
(2) যৌন নির্যাতন
ক্রিমিনাল কোড অনুযায়ী, একজন আরেক জনের সম্মতি ছাড়া যৌন আকাঙ্খা নিয়ে ছোঁয়া অথবা যৌন কর্ম, নিষেধ করা সত্ত্বেও যৌন সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়া, কোনো ব্যক্তিকে অনিরাপদ ও অবমাননাকর কাজ করতে বাধ্য করা যৌন নির্যাতন হিসেবে বিবেচিত।
মনে রাখবেন, কানাডাতে স্বামী বা স্ত্রীকে শারীরিক সম্পর্ক করতে বাধ্য করা যাবে না। (অনুচ্ছেদ ২৭৮)
একজন ব্যক্তি যৌন সম্পর্ক করতে অনিচ্ছা মৌখিকভাবে (না বলে) অথবা ঈঙ্গিতের মাধ্যমে আপত্তি প্রকাশ করতে পারে।
সম্মতি ছাড়া কারো সাথে সব ধরনের যৌন সম্পর্ক কানাডাতে অপরাধ হিসেবে বিবেচিত এবং এটি ক্রিমিনাল কোডের যৌন আক্রমণের আওতায় পড়ে। (অনুচ্ছেদ ২৭১)
(3) আবেগজনিত অথবা মনস্তাস্তিক নির্যাতন
যদিও বেশিরভাগ ধরনের আবেগজনিত নির্যাতন কানাডাতে অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয় না, তবে, তাদের উপস্থিতি জানান দেয় যে, সহিংসতার মাত্রা আরো বাড়তে পারে। আবেগজনিত অথবা মনস্তাস্তিক নির্যাতন তখন হয়, যখন একজন ব্যক্তি তার কথা বা কাজের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ, ভীত অথবা তাদের আত্ন-সম্মান খাটো করা অথবা অপরজনকে আলাদা করার চেষ্টা করে। এই ধরনের নির্যাতনের মধ্যে আছে:
- হুমকি, গালি অথবা অপমান
- সার্বক্ষণিক চেঁচামেচি ও সমালোচনা
- অপর জনের কাজকর্ম কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ (কোনো ব্যক্তিকে তার বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে বাধা দেয়া)
- ভয় দেখানো: ভীতি প্রদান অথবা আবমাননা করা
- পিছু পিছু থাকা
যে ধরনের আবেগজনিত নির্যাতনকে কানাডাতে অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়।
কাউকে বা কারো সম্পদ ক্ষতি করার হুমকি দেয়া অথবা কাউকে হত্যার হুমকি দেয়া (অনুচ্ছেদ ২৬৪.১)
অপরাধমূলক হয়রানি অর্থাৎ কারো সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা এবং তাদের অনুসরণ করা কানাডাতে একটি অপরাধ, যা ২৬৪ অনুচ্ছেদে আছে।
(4) আর্থিক নির্যাতন
আর্থিক নির্যাতন ঘটে যখন একজন অপরের অর্থ অথবা সম্পত্তি নিজের নিয়ন্ত্রণে আনতে চায় অথবা ব্যবহার করে। কাউকে কোনো দলিলে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা অথবা তাদের সম্পত্তি বিক্রি করতে বাধ্য করা অথবা তাদের উইল পরিবর্তন করা।
সুতরাং, বেশিরভাগ ধরনের আর্থিক নির্যাতনই কানাডাতে অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়; চুরি (অনুচ্ছেদ ৩২২), ডাকাতি (অনুচ্ছেদ ৩৪৩) এবং প্রতারণা (অনুচ্ছেদ ৩৪১)।
(5) অবহেলা
অবহেলার ঘটনা ঘটে যখন পরিবারের একজন সদস্য যার অপরকে দেখাশোনার বাধ্যবাধকতা থাকে, সে যদি জীবনের মৌলিক চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হয়। এগুলো হলো:
- উপযুক্ত খাবার ও গরম কাপড় না দেয়া
- পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা, চিকিৎসা ও পরিচ্ছন্নতা দিতে ব্যর্থ হওয়া
- ক্ষতি প্রতিরোধে করতে ব্যর্থ হওয়া
- পর্যাপ্ত তদারকি নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হওয়া
যদিও সব ধরনের অবহেলাকে কানাডাতে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয় না, অনুচ্ছেদ (২১৫.১খ) নির্দিষ্ট করে দেয় যে, বাবা অথবা মা তার নির্ভরশীল শিশুদের জীবনের মৌলিক চাহিদা মেটাতে না পারা এবং শিশুদের অনাথ করা কানাডাতে অপরাধ হিসেবে গণ্য। এটা মনে রাখা দরকার, এই ধরনের নির্যাতন থেকে শিশুদের সুরক্ষা দিতে বিশেষ আইন আছে। কোনো বাবা অথবা মায়ের বিরুদ্ধে যদি এই ধরনের নির্যাতনের সন্দেহ হয়, শিশুটিকে সুরক্ষা দিতে ডিপার্টমেন্ট অব ইয়ুথ প্রটেকশন বিষয়টির মধ্যস্থতা করতে পারে।
পরিশেষে, আইন অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি যদি মনে করেন এমন নির্যাতনের শিকার তিনি কখনও হয়েছেন, তিনি নির্যাতনকারীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে পারেন। পারিবারিক কলহে মধ্যস্থতা করতে যদি পুলিশ ডাকা হয়, তারাও মামলা করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিতে পারেন। এটা মনে রাখা দরকার যে, যখন কোনো নির্যাতনকারীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়, তখন মূলত রাষ্ট্রই মামলাটি পরিচালনা করে এবং ভুক্তভুগি হিসেবে ওই মামলায় আপনি প্রত্যক্ষ সাক্ষী। আদালতে জবানবন্দি দেয়ার প্রক্রিয়া দীর্ঘ এবং বিরক্তিকর। তাই পরবর্তী অনুচ্ছেদে প্রক্রিয়া সম্পর্কে আরো তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে।
যখন একটি অপরাধমূলক ঘটনা ঘটে, ভুক্তভুগি অথবা পুলিশ নির্যাতনকারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনতে পারেন। মনে রাখতে হবে যে, আপনি যদি কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার সিদ্ধান্ত নেন, এটা নিয়ে অপরাধবোধ করার কিছু নেই। আপনি একটি অপরাধের শিকার হয়েছেন, নির্যাতনকারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে আপনি আপনার এবং আপনার শিশুদের সুরক্ষা করছেন।
সিভিল ও ক্রিমিনাল মামলার ক্ষেত্রে আদালতের প্রক্রিয়ার পার্থক্য কি কি?
- যদি এটা দেওয়ানী মামলা হয় (উদাহরণ: ডিভোর্স অথবা হেফাজত)
- যখন বিবাহ বিচ্ছেদের মতো কোনো দেওয়ানী দ্বন্দ তৈরি হয়, তখন আপনাকে একজন আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শের উপদেশ দেয়া হয়, যিনি আপনাকে আদালতে আপনার প্রতিনিধিত্ব করবেন এবং আদালতে উপস্থাপনের সমস্ত কাগজপত্র তৈরি করতে আপনাকে সহযোগিতা করবেন। আপনি একজন সমাজকর্মীর সঙ্গেও কথা বলতে পারেন, যিনি পুরো প্রক্রিয়ার সময় মানসিকভাবে আপনাকে সাহায্য করবেন।
- যদি এটা ফৌজদারী মামলা হয় (উদাহরণ: দাম্পত্য বা পারিবারিক সহিংসতা)
- একবার পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানো হলে অপরাধ তদন্তকারী কর্মকর্তার দায়িত্ব ন্যাস্ত হয় যে আপনার মামলা বিচারের জন্য পাঠানো হবে কি না। প্রসিকিউটর সিদ্ধান্ত নেবেন আপনার বিবাদীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না।
- যদি আপনার মামলার বিচার শুরু হয়, সেক্ষেত্রে আপনি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ওই মামলার প্রধান সাক্ষী হবেন। তবে, আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে আপনি সাক্ষ্য দিবেন কি না। আপনি যদি সাক্ষ্য দিতে চান, আদালত ভবনে আপনাকে এটা করতে হবে।
- আপনার মামলা একবার এই স্তরে আসলে আপনার জন্য অভিযোগ তুলে নেয়া অসম্ভব। একবার প্রসিকিউটর আপনার বিবাদীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিলে, মামলাটি আপনার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।
ফৌজদারি বিচার প্রক্রিয়া
আদালতে কে কি কাজ করে?
- বিচারক কি করেন?
- বিচারক হলেন ওই ব্যাক্তি যিনি মামলার চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন। রায় ঘোষণার আগে দুই পক্ষের কথা শুনবেন, তথ্যগুলো বিবেচনায় আনবেন এবং আইন ব্যবহার করবেন।
- মনে রাখবেন, বিচারক নৈতিকতার মানের দিক থেকে মূল্যায়ণ করবেন না বরং কতটুকু আইন মেনে করা হয়েছে তারই মূল্যায়ন করা হবে। আদালতে কেউ, এমনকি বিচারকও, নির্ধারণ করবেন না কারো আচরণ ঠিক হয়েছে না ভুল হয়েছে বরং তারা বলবেন, আইনগত না বেআইনী।
- রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা কি করেন?
- রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা রাষ্ট্রের এবং ঘটনাক্রমে ভুক্তভুগীর প্রতিনিধিত্ব করেন। এর অর্থ হলো তারা ভুক্তভুগির পাশে বসবেন কিন্তু তারা ভুক্তভুগীর স্বার্থকে প্রতিনিধিত্ব করে না। তাদের ভূমিকা হলো উভয় দিক থেকেই রাষ্ট্রের আইন-কানুনের মর্যাদা নিশ্চিত করা এবং অভিযুক্তের সুবিচার নিশ্চিত করা। মোটকথা, যেহেতু অভিযুক্তরা আইন ভাঙে, তাদের নিশ্চিত করতে হয় যে তারা শাস্তি পাবেন। যেহেতু আইনে অভিযুক্তের মৌলিক সুরক্ষার কথা বলা আছে, এটা নিশ্চিত করতে হয় যে বিচারের সময় পর্যন্ত সকল অভিযুক্তের অধিকার সুরক্ষিত থাকবে।
- বিবাদির আইনজীবী কি করেন?
- বিবাদির আইনজীবীরা অভিযুক্ত ব্যাক্তির প্রতিনিধিত্ব করেন এবং প্রমাণ করার চেষ্টা করেন যে অভিযুক্ত নিরাপরাধ। তারা অপরাধী হিসেবে প্রমাণিত হলেও তাদের আইনজীবীরা যতোদুর সম্ভব প্রমাণ উপস্থান করে শাস্তির পরিমাণ কমানোর চেষ্টা করেন।
- সাক্ষীরা কি করে?
- সাক্ষীদের কাঠগড়ায় ডেকে তাদের বলা হয় তারা তাদের পাঁচটি ইন্দ্রিয় দিয়ে যা সরাসরি অনুভব করেছেন তা বর্ননা করতে।(সাক্ষী বলতে পারেন “আমি একজনকে চিৎকার দিতে শুনেছি), কারণ সে সরাসরি তাকে শুনেছে। একজন সাক্ষীকে নিরপেক্ষ এবং কিছু জিনিস সর্ম্পকে জানার জন্য তাকে সত্য বলতে হবে।
- নিরাপত্তাকর্মীরা আদালত ভবনে কি করেন?
- নিরাপত্তাকর্মীরা আদালত প্রাঙ্গনের পুরো প্রক্রিয়ার সময় নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন। তিনি অননুমোদিত ব্যক্তিকে আদালত কক্ষে প্রবেশে বাধা দিতে পারেন এবং কোনো অভিযুক্ত ব্যাক্তি আক্রমণাত্বক হলে পদক্ষেপ নিতে পারেন।
- জুরিরা কি করেন?
- জনগণের মধ্যে থেকে যথেচ্ছাভাবে নেয়া কিছু মানুষ নিয়ে গঠিত হয় জুরি এবং শাস্তিকে সামাজিক সিদ্ধান্ত হিসেবেও উপস্থাপন করা হয়। (সামাজিক মূল্যবোধের প্রতিফলন)। তারা পুরো বিচার প্রক্রিয়ার সময় উপস্থিত থাকেন এবং উভয় পক্ষের শুনানি শেষে সিদ্ধান্ত নেন যে অভিযুক্ত অপরাধী না নিরাপরাধ। যদি অভিযুক্তের অপরাধ প্রমাণিত হয়, তাহলে বিচারক শাস্তির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেন।
- অভিযুক্ত কি করেন?
- পুরো বিচার প্রক্রিয়ার সময় অভিযুক্ত উপস্থিত থাকেন। অভিযুক্তের নিরব থাকার অধিকার আছে। সুতরাং, সাক্ষ্য দেয়া তার জন্য বাধ্যতামূলক নয়। তারা যদি সাক্ষ্য দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তারা সাক্ষ্য দিতে পারবেন যখন বিচারক তার সাক্ষ্য নিতে চাইবেন।
সাক্ষ্য দেয়ার গুরুত্ব কি?
- যদি আদালত থেকে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য আপনাকে তলব করা হয় (যদি আপনি সপিনা পান), সেক্ষেত্রে সাক্ষ্য দেয়া বাধ্যতামূলক। তবে, আপনি যদি না সপিনা সেক্ষেত্রে আপনি সাক্ষ্য দিতেও পারেন নাও দিতে পারেন।
- এটা মনে রাখা দরকার যে আদালতে সাক্ষ্য দেয়া হলো নিজের ক্ষমতায়নের একটি পথ। অধিকন্তু, যে পরিস্থিতিতে আপনি আপনার আক্রমণকারীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিচ্ছেন, আপনার যে শক্তি আপনার আক্রমণকারী ছিনিয়ে নিয়েছিলো তা ফিরে পাবার একটি পথ এবং আক্রমণকারীকে দেখিয়ে দেয় যে তারা যা করেছিলো তা ঠিক করেনি।
সাক্ষ্য দেয়ার সময় কি মনে রাখা দরকার?
আপনি যখন আদালতে সাক্ষ্য দিবেন আপনি আনুষ্ঠানিক শপথের কারণে সত্য বলতে বাধ্য। আপনি যদি কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে মিথ্যা বলেন, তাহলে আপনি মিথ্যা সাক্ষ্য দিচ্ছেন। এর অর্থ দাড়ায়, সত্য না বলে আপনি আদালত অবমাননার অপরাধ করছেন। (এর দায়ে আর্থিক ও জেল হতে পারে।)
- কি হবে যদি আপনাকে প্রশ্ন করা হলো কিন্তু আপনি উত্তর মনে করতে পারছেন না?
- প্রথমত এমন ঘটলে আপনার উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। শুধু বিচারককে জানান, প্রশ্নের উত্তর আপনার মনে পড়ছে না। আপনার আইনজীবীকে পরের প্রশ্নে যাওয়ার অনুরোধ করুন।
- যদি আপনাকে বিব্রতকর কোনো প্রশ্ন করা হয়?
- মনে রাখবেন, আদালত কক্ষে আপনাকে বিব্রত অথবা বিচার করার জন্য কেউ নেই। বিব্রতকর প্রশ্নের উত্তর দেয়ার উদ্দেশ্য হলো আপনার ক্ষেত্রে আসলে কি হয়েছে তা যাতে বিচারক বিস্তারিতভাবে জানতে পারেন। এতে বিভিন্ন পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিচারের রায় দিতে একজন বিচারকের জন্য সুবিধা হবে।
- যখন আপনাকে কোনো প্রশ্ন করা হয়েছে যা আপনি বুঝতে পারছেন না?
- নির্দিধায় আপনি ওই ব্যাক্তিকে দ্বিতীয়বার প্রশ্ন করার অথবা প্রশ্নটি ব্যাখ্যা করার অনুরোধ জানান। মনে রাখবেন, কোনো প্রশ্ন বোঝার ক্ষেত্রে লজ্জার কিছু নেই, বিশেষ করে যখন কানাডার আইনী শব্দগুলোর সঙ্গে আপনি পরিচিত নন।
- যদি আপনাকে এক সঙ্গে একাধিক প্রশ্ন করা হয়?
- প্রশ্নকর্তাকে তার প্রশ্ন এক এক করে বলার অনুরোধ করেন যাতে আপনি একেকটির আলাদা আলাদা উত্তর দিতে পারেন। কোনো প্রশ্নের উত্তর দেয়ার আগে সময় নিয়ে চিন্তা করা জরুরি এবং যতোদূর সম্ভব সংক্ষেপে উত্তর দেয়া ভালো।
আমার সাক্ষ্য দেয়া শেষ হলে আমি কি করবো?
আপনার সাক্ষ্য দেওয়া শেষ হলেও আইনি প্রক্রিয়া চলবে বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত। তারপর শুনানির সময় বিচারক যা শুনেছেন তা মনে রেখে সময় নিয়ে তিনি বিচারের রায় লিখবেন। সুতারং আপনার বক্তব্য প্রমাণ করার এবং বিচারকের মনযোগ আকর্ষণ করার জন্য সাক্ষ্য দেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা ক্ষমতায়নের একটি অভিজ্ঞতাও এ সময় আপনি ব্যাক্তিগতভাবে দেখানোর সুযোগ পাবেন আপনার আক্রমণকারী কর্মকান্ড কতটা অগ্রহণযোগ্য।
কানাডাতে কোনো ধরনেরই দাম্পত্য সহিংসতা সহ্য করা হয় না। আপনি যদি আপনার ও আপনার সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকেন। সেক্ষেত্রে অনেকগুলো উপায় আছে যেখান থেকে আপনি সহযোগিতা পেতে পারেন।
- এটা যদি জরুরি হয়ে পড়ে: ফোন করুন ৯১১
- এসওএস ভায়ালেন্স কনজুগেইল ১-৮০০-৩৬৩-৯০১০ আপনাকে বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রের তথ্য দিয়ে সহায়তা করবে।
- বহিঃবিভাগের সেবার জন্য যোগাযোগ করুন শিল্ড অব এথেনা: ১-৮৭৭-২৭৪-৮১১৭
মনে রাখবেন: সহিংসতা থেকে মুক্তি পাওয়া আপনার অধিকার। আপনিই সহিংসতার চক্রকে ভাঙ্গতে পারেন।